আজ দ্বিতীয় দফায় ৬০টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তৃতীয় ধাপের ৬৪টি পৌরসভার নির্বাচন হবে ৩০ জানুয়ারি আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জানুয়ারি। স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচন ঘিরে বাড়ছে সহিংসতা, ঘটছে প্রাণহানি। এই সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে মূলত কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা।
এ পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় একই ওয়ার্ডে একই দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাদের মরিয়া চেষ্টা শেষ পর্যন্ত রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। সহিংসতার নেপথ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা।
গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও কয়েকটি পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার কর্মযজ্ঞে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চার ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন শতাধিক কর্মী-সমর্থক। এটাই যখন বাস্তবতা, তখন আজকের নির্বাচনগুলোয় পরিবেশ কেমন থাকবে, তা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
অবস্থা এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ১৬টিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দিষ্টসংখ্যক সদস্যের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সব নির্বাচনই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক-এটাই সুনাগরিকদের চাওয়া ও প্রত্যাশা। নির্বিঘ্ন পরিবেশে নিশ্চিন্ত মনে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারলে তা গণতন্ত্রের সৌন্দর্যকেই প্রকাশ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশের নির্বাচনগুলো শতভাগ সহিংসতামুক্ত হতে পারছে না। অবশ্য আমাদের প্রতিবেশী কোনো কোনো দেশেও নির্বাচনী সংঘাত লক্ষ করা যায়।
বস্তুত রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিম্নমানই নির্বাচনে সহিংসতার মূল কারণ। দেশের স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন-প্রতিটিতেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব অপরিসীম। দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে যে সহিংসতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তার পেছনেও রয়েছে দুই বড় রাজনৈতিক দলের ভূমিকা। এই নির্বাচনে বিশেষত সরকারি দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
কাউন্সিলর পদটি দলীয় নির্বাচনী প্রতীকে হচ্ছে না বলে স্থানীয় পর্যায়ের সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান অথবা প্রভাবশালী নেতারা এ পদে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর তাতেই তৈরি হয়েছে সংকট। নিজ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অতি উৎসাহ জন্ম দিচ্ছে সহিংসতার।
আমাদের কথা হলো, যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। আজকের নির্বাচনী পরিবেশ যাতে শান্তিপূর্ণ থাকে, সে জন্য রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের সংযত আচরণ করতে হবে। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হবে।
শুধু আজকের নির্বাচন নয়, সামনের দিনগুলোয় অনুষ্ঠেয় স্থানীয় পর্যায়ের বাকি ধাপের নির্বাচনগুলোও যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সেদিকেও রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষ নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে একটি সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। বস্তুত নির্বাচনের সব অংশীজনকেই উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচয় দিতে হবে।