কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির ১৯৫১ সালের ৭ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরে স্কুল-কলেজের লেখাপড়া শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর হুমায়ুন কবির একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিন দশকের বেশি সময় কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিজি ও নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও কলকাতায় উপহাইকমিশনারসহ বিভিন্ন উচ্চতর পদে আসীন ছিলেন।
কাজ করেছেন জাতিসংঘে। বর্তমানে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের অ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ৬ জানুয়ারি দেশটির কংগ্রেস চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকদের তান্ডব, ট্রাম্পইজমের প্রভাব, বর্তমান সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সামনে সৃষ্ট আশঙ্কা, জো বাইডেনের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নানা বিষয়াবলি নিয়ে কথা বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা এই কূটনীতিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনিন্দ্য আরিফ।
প্রশ্ন : ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ঘটা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের ঘটানো তাণ্ডবকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
হুমায়ুন কবির : এটা মার্কিন গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর একটা বড় ধরনের আঘাত। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে সংঘটিত এ ঘটনা অভাবনীয় এবং অপ্রত্যাশিত। এ ঘটনার নেপথ্যে অনেকগুলো কারণ কাজ করছে। এর মধ্যে আমার কাছে প্রথম যে কারণটি মনে হয় তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা অনেক দিন ধরে কাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এবং সামাজিক প্রক্রিয়ায় একধরনের বিবর্তন ঘটেছে। তারা অনেক দিন ধরে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাব অনুভব করছে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের মধ্যে এই অনুভূতি কাজ করেছে।
এটা অনেক দিন ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এই অনুভূতিকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। ফলে সেখানে যে মনস্তাত্ত্বিক বিভাজন ছিল, সেটা আস্তে আস্তে রাজনৈতিক বিভাজনে রূপান্তরিত হয়েছে। এই বিভাজনটা এখন এত মারাত্মক জায়গায় পৌঁছেছে যে সেটা এখন যুক্তিহীনতা ও অবিজ্ঞানমনস্কতার মতো ভয়ংকর বিষয়গুলোর আশ্রয়ে চলে গেছে।
গত প্রেসিডেন্ট ও সিনেট নির্বাচনে যে ভোট জালিয়াতি হয়েছে কিংবা ভোট কারচুপি হয়েছে বা দুর্নীতি হয়েছে, এ কথাটি কিন্তু কোথাও প্রমাণিত হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের নির্বাচনী পদ্ধতির মাধ্যমে চেষ্টা করলেও সেখানে কিছু পাননি, স্থানীয়ভাবে আদালতের শরণাপন্ন হয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও তাতে কিছু প্রমাণিত হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তার লোকেরা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, সেখানেও কিছু হয়নি। অর্থাৎ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে কিংবা বড় ধরনের ত্রুটি হয়েছে, এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও সেটা তারা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। কিন্তু ট্রাম্পের অনুসারীদের মধ্যে এই বিশ্বাসটি দৃঢ়ভাবে গেঁথে গিয়েছে। যার ফলে তারা প্রথমে প্রতিবাদী হয়েছে এবং পরে ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের অধিবেশনে হামলা করে নগ্নরূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। সুতরাং বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে একটা বড় ধরনের চড়াই-উতরাই চলছে। তাদের এটা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে, সেটা মনে করার কারণ নেই। এই প্রেক্ষাপট তৈরি হতে যেমন সময় লেগেছে, তেমনি এটা সমাধান করতেও সময় লাগবে।
তবে এই অভাবনীয় এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনার মধ্যেও দুটি জিনিস খেয়াল করতে হবে, যেটা সেখানকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শক্তিকে প্রতিভাত করেছে। প্রথমত, তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো নৈতিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তির নানা প্রচারণা, উসকানি সত্ত্বেও স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মানুষের ভোটের মাধ্যমে এই প্রেসিডেন্টকেই পরাজিত করেছেন। তাদের গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং অঙ্গীকার এই ভোট দেওয়ার মাধ্যমেই পরিলক্ষিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার চার বছরে প্রায় ৫৫ জন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতি রয়েছেন। কিন্তু তারা তার দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নির্বাচনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। পাশাপাশি, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা কংগ্রেসও পক্ষপাতহীন ভূমিকা রেখেছে। তাই বলা যায় যে সংঘাত আমরা যেমন দেখছি, তার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও পরিলক্ষিত হয়েছে। তাই আমরা আশাহত হলেও আশাহীন হয়ে যাইনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আমাদের আশান্বিত করে।
প্রশ্ন : অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকই বলছেন যে ট্রাম্প চলে গেলেও ট্রাম্পইজমের প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু সময় ধরে থাকবে। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
হুমায়ুন কবির : ট্রাম্প আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত দিন ধরে চলা একটা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বিস্ফোরণের মুখে দেশটিকে ঠেলে দিয়েছেন। আমরা জানি দেশটি অনেক দিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি ছিল। সেখানকার আপামর মধ্যবিত্ত জনগণ দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্য দিয়ে দিন অতিক্রম করছিল। এটাকে বলা হতো ‘আমেরিকান ড্রিম’। কিন্তু কয়েক দশক ধরে চলা বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার অভিঘাতে সেই স্বপ্ন অনেকটা ধাক্কা খেয়েছে। যারা ‘আমেরিকান ড্রিম’-এর অংশীদার ছিল, তারা এতে আশাহত হয়েছে। এর প্রধান একটি অংশ হলো শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী। কৃষ্ণাঙ্গরা এর ভুক্তভোগী হলেও সবচেয়ে আঘাত এসেছে এই সাদা চামড়ার জনগোষ্ঠীর ওপর। এখন যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাবের ক্ষত যত দিন বিদ্যমান থাকবে, তত দিন এর সুযোগ নিয়ে ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিরা অস্থিরতা তৈরি করবেন। জো বাইডেন এটা লক্ষ করেছেন। তাই তিনি সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু অর্থনৈতিক উদ্যোগের কথাও বলেছেন। সুতরাং বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্র এখন একটা মোড় পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে রয়েছে। হয় তারা এই সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন ঘটাবে, নয়তো তাদের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হবে। আর এই সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। কেননা তার অর্থনীতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি, তার কূটনৈতিক প্রভাব সারা বিশ্বে বিস্তৃত এবং তার সামরিক অবস্থান সবার ওপরে, তাই এই সংঘাতের প্রভাব সারা বিশ্বেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
প্রশ্ন : এ ধরনের ঘটনা কী বিশে^র অন্যান্য কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোকে উৎসাহিত করবে না?
হুমায়ুন কবির : ইতিমধ্যেই এ ঘটনা কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোকে উৎসাহিত করেছে। তবে এখন যেভাবে ৬ জানুয়ারির ঘটনার দোষীদের পাকড়াও করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেটা অব্যাহত থাকলে তাদের উৎসাহে ভাটা পড়বে। বাইডেন প্রশাসন যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে পারে, তাহলে যারা ট্রাম্প দ্বারা উৎসাহিত হতেন এবং প্রভাবিত হতেন, তাদের পালে হাওয়া অনেক কমতে থাকবে। তবে আশঙ্কা কিন্তু থেকে যাবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বই এখন একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এখন তথ্যপ্রযুক্তির একটা বড় ঢেউ সারা বিশে^ আছড়ে পড়ছে। তাই এই মুহূর্তে এই ঢেউয়ের মুখে আমরা যদি সমন্বিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে না পারি, তাহলে শঙ্কা তো থেকেই যাবে।
প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনার জেরে ৮ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় টুইটার। পৃথিবীতে এই প্রথম একজন প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটল। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ট্রাম্প ব্যাপক সমালোচিত হলেও, তার টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাকে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন বিশ্বনেতাদের অনেকেই। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের মতে, কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
হুমায়ুন কবির : এটা ব্যক্তিগত সেন্সরশিপের বিষয় নয়। যেকোনো ব্যক্তিই যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নেতিবাচক সামাজিক প্রভাব তৈরি করে, তাহলে তো তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সুতরাং কেউ যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে হিংসা ছড়ায়, সহিংসতা তৈরি করার প্রচেষ্টা চালায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বলেন আর রাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায় বলেন, সবারই ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত। হিংসা ছড়িয়ে সহিংসতা তৈরি করার অধিকার তো কারোরই নেই। তাই কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এই অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে তার মধ্যে আমি কোনো অন্যায় দেখি না।
প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রে এখন কয়েক লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছেন। বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি তাদের ওপর কী বিরূপ প্রভাব ফেলবে?
হুমায়ুন কবির : সাধারণভাবে তারা হুমকির মধ্যে পড়েন না। তবে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হলে যেকোনো মানুষই শঙ্কার মধ্যে পড়ে। ‘বহুত্ববাদ’ অর্থাৎ সারা বিশ্বের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সুযোগ তৈরি করা, তাদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা ইত্যাদির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু একটা হলমার্ক হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে উপস্থাপিত হয়েছিল। তারা একটি মডেল সৃষ্টি করেছিল। এখনকার প্রেক্ষাপট তো প্রকৃতই অভিবাসীদের জন্য একটা আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, বাংলাদেশের অভিবাসীরা খুব একটা হুমকির মধ্যে পড়ছেন না। কেননা যুক্তরাষ্ট্রে যারা বর্ণবাদী, তারা বাংলাদেশিদের হুমকি মনে করছেন না। তারা মূলত হিসপ্যানিক জনগোষ্ঠীকে তাদের মূল টার্গেট মনে করছে। ভারতীয়দেরও তারা টার্গেট করতে পারে, কেননা তারা অনেকেই ভালো পর্যায়ে কাজ করছেন। সেই তুলনায় বাংলাদেশিরা যে পর্যায়ে কাজ করেন, তাতে তারা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার মতো জায়গায় নেই। তবে এই উত্তেজনা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আশঙ্কার জায়গা তো থেকেই যাবে।
প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ঝোঁক হলো অভ্যন্তরীণ ও বহির্মুখী প্রবণতার মধ্যে দোলায়মান থাকা। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ছিলেন বাইরের দেশে হস্তক্ষেপবাদী। তুলনামূলকভাবে, তার উত্তরসূরি বারাক ওবামা ছিলেন কম। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মূলত হস্তক্ষেপবিরোধী। জো বাইডেনের কাছে আমরা কেমনটা আশা করতে পারি?
হুমায়ুন কবির : এটা কয়েকটি জিনিসের ওপর নির্ভর করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তারা নিজেদের একক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। সেই সমীকরণ অনুযায়ী, তারা ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছিল এবং এই সূত্রায়ণ বাস্তবে রূপায়িত করতে চেয়েছিল। কিন্তু এক অর্থে তারা ইরাকে ব্যর্থ হয়েছে। আবার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একই চেষ্টা লিবিয়ায় করেছিলেন, সেটাও ব্যর্থ হয়েছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থায় রয়েছে এবং যে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে, তাতে তারা এই ভূমিকা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ছিল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ জন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন এবং সত্যি সত্যিই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এর যে ব্যয়ভার সেটা তারা বহন করতে পারছে না। তাদের এখনকার অর্থনীতি তা সমর্থন করছে না এবং এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এসে যে ধরনের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে নিয়োজিত হবেন, তাতে আমার মনে হয় না তার সামনে সেই সুযোগ থাকবে। তাই তার প্রশাসনের পক্ষে এ ধরনের পদক্ষেপে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকবে না।