বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি

332

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণই রয়েছে ৬০ প্রতিষ্ঠানের কাছে, যা মোট জালিয়াতির ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে বিধি ভঙ্গ করে ২৬ গ্রাহককে দেওয়া হয়েছে বড় অঙ্কের ঋণ, যার পরিমাণ ২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা এবং এটি মোট জালিয়াতির ৫৯ শতাংশ।

Advertisement

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত বছরের শেষদিকে বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে; যেখানে বলা হয়েছে-ব্যাংকের গুলশান, শান্তিনগর, দিলকুশা ও ঢাকার প্রধান শাখায় বড় ধরনের জালিয়াতিগুলো হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকের পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখায়ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

বস্তুত, ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অনিয়মের জালে আটকে যায় ব্যাংকটি। জাল দলিল, একজনের জমির দলিল দিয়ে অন্যজনকে হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার মৌখিক ও টেলিফোনে নির্দেশ দেন সাবেক এ চেয়ারম্যান।

শুধু তাই নয়, নিয়ম ভঙ্গ করে স্বামী ও স্ত্রীকে পৃথকভাবে ঋণ দেওয়ার নজিরও স্থাপন করেছে বেসিক ব্যাংক। কম দামি জমির মূল্য ৩৫ থেকে ৪০ গুণ বেশি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঋণ ছাড় করার মতো অনৈতিক কাজ করতেও পিছপা হয়নি বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ।

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায়ই ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও এর লাগাম কেন টেনে ধরা হচ্ছে না, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। উদ্বেগের বিষয় হলো, ব্যাংক খাতে এখন পর্যন্ত জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। মূলত অব্যবস্থা ও দুর্বল আইনের কারণে প্রতি বছর ব্যাংক খাত থেকে ঋণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে এবং সিংহভাগই পাচার হচ্ছে বিদেশে।

দেখা গেছে, অনিয়ম বা জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের অধিকাংশই কুঋণ বা খেলাপি ঋণে পর্যবসিত হয়। এ অবস্থায় দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেয়া জরুরি। অর্থনীতিবিদরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। এটা কমাতে না পারলে আমাদের অর্থনীতি টেকসই হবে না।

ব্যাংক ও আর্থিক খাত দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। এটি বিবেচনায় নিয়ে এ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। খাতটির সুরক্ষায় পৃথক কমিশন গঠনের জন্য দাবিও আমলে নেয়া দরকার।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবে কেবল বেসিক ব্যাংক নয়; সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও কৃষি ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিতে জড়িতদের এবং ঋণখেলাপিদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত।

দুর্ভাগ্যজনক হলো, অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার চেয়ে ছাড় দেয়ার মানসিকতাই দেখা যায় বেশি। এ প্রবণতা পরিহার করা না হলে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে শৃঙ্খলা ফিরবে না, তা বলাই বাহুল্য।

Advertisement