গণমাধ্যম সচেতন নাগরিক সমাজের ক্ষমতা বিপুল স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর স্থাপনে প্রথম বিজয়ে তা আবারও প্রমাণিত।
ঐতিহাসিক যাত্রামোহন সেন ভবনকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি যাদুঘরে রূপান্তরিত করার প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বিষয়ে চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক সমাজ এর উদ্যোগে সাংবাদিক সম্মেলন সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজন করা হয়।
উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম এই উপমহাদেশের এক অনন্য স্থান। এ জেলা বিপ্লবতীর্থ, বীরপ্রসবিনী চট্টগ্রাম হিসেবে খ্যাত। চট্টগ্রাম বহু কৃতী মানুষের জন্মস্থান, তাঁদের কীর্তি ও স্মৃতিধন্য এক পুণ্যভূমি।
দুর্ভাগ্যের বিষয় পাকিস্তান আমলে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তার কৃতী ব্যক্তিদের কোনো স্মৃতি রক্ষা করা হয় নি, যথাযথ সম্মানও তাঁরা পান নি। আবার মুক্তিযুদ্ধে বন্দরনগরীর বিশিষ্ট ভূমিকা সত্ত্বেও সে স্মৃতি সংরক্ষণেও ব্যবস্থা হয় নি। অথচ নতুন প্রজন্মের জন্যে এমন উদ্যোগ যে কত জরুরি তা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের সংবিধানে এসব স্মৃতিমণ্ডিত স্থাপনা ও সকল সম্পদ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে; এতদসংক্রান্ত প্রত্নসামগ্রী রক্ষায় আইনও রয়েছে। কিন্তু সচেতনতার অভাব এবং এক শ্রেণির মানুষের চরম লোভের শিকার হয়ে এসব সম্পদ বেদখল রয়েছে, লুণ্ঠিত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে। এরকমই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি হতে যাচ্ছিল দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন ও নেলী সেনগুপ্তার বাসভবনটি।
সাংবাদিক ও সচেতন জনগণের ঐকান্তিক সহযোগিতায় আমরা ভবনটি দখল ও ভেঙে ফেলার চক্রান্ত ঠেকাতে সক্ষম হয়েছি। আবারও প্রমাণিত হল গণমাধ্যম ও জনগণের শক্তি বিপুল, এই শক্তির সক্রিয় ভূমিকা নাগরিকসমাজকে অনেক ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়নে সফল করে তুলতে পারে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমরা যতীন্দ্রমোহন সেনের দুই নাতির সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছি। তারা নিউজিল্যান্ডে বসবাস করে। এই জাদুঘরে স্থাপনে তাদের সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে। একটি ভালো জাদুঘর করতে সেসব সংগ্রহ করে তা আধুনিক ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আমরা সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে এরকম দুর্লভ কোন স্মৃতিচিহ্ন, তথ্য থাকলে তা চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক সমাজকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন জেলা প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় এ ভবনটি রক্ষা হয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। একটি যাদুঘর করতে যে সমস্ত বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন আমরা তাদের সাথে ইতিমধ্যেই কথা বলা শুরু করেছি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এখন সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংবাদিক আলীউর রহমান। বক্তব্য রাখেন নাট্যকার ও সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডাক্তার মাহফুজুর রহমান,গবেষক প্রফেসর ডঃ ইদ্রিস আলী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক তাপস হোর, আবৃত্তিকার রাশেদ হাসান, ওয়ার্কাস পার্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, কলেজ শিক্ষক নেতা জাহাঙ্গীর আলম, এডভোকেট রুবেল পাল, চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল পালিত প্রমুখ।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্থাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা আগামী ২৯ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেল চারটায় চেরাগী পাহাড় থেকে জেমসেন ভবনে গিয়ে সমাপ্ত হবে।