চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ব্যক্ত করেছেন নিজের প্রতিক্রিয়া।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে বহদ্দার বাড়িতে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সহ শুভানুধ্যায়ীরা।
এসময় রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই চট্টগ্রামকে আমি পরিকল্পিতভাবে সাজাতে চাই। এজন্য সবার সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পর্যালোচনা করে যেটা বাস্তবসম্মত হবে সেটাই গ্রহণ করবো।
বিভিন্ন এলাকায় অনেক সমস্যা আছে। ওয়ার্ডগুলোতে-মহল্লায় অনেক দরিদ্র মানুষ বসবাস করে।
একজন রিকশা চালকেরও মেধা আছে, বুদ্ধি আছে। আর্থিক সমস্যার কারণে সে হয়তো উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি।
তার বুদ্ধিও অনেক সময় কাজে লাগতে পারে।
‘আমি এলাকার সব মানুষকে ডাকবো। মহল্লা সর্দার থেকে আরম্ভ করে এলাকার গণ্যমান্য লোক-সবার পরামর্শ নেবো। আপনার এলাকার কি সমস্যা আছে-সেটা আপনিই চিহ্নিত করতে পারেন। বাইরের কেউ এসে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই এলাকার মানুষই এলাকার সমস্যাগুলো দেখিয়ে দেবে। তারপর এসব সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায়, তাদের পরামর্শ নিয়ে এবং যে পরামর্শ গ্রহণযোগ্য হবে, যে পরামর্শ ওই এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রযোজ্য হবে-সেটাই গ্রহণ করবো ও বাস্তবায়ন করবো। তখন কেউ আর এককভাবে মেয়রকে দোষারোপ করতে পারবে না। তখন আমি বলবো-আপনাদের সবার সাথেই তো পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন মেয়রকে দোষ দেওয়ার কোনও অবকাশ আপনাদের নাই’।
নগরপিতা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সফলতা আসলে সবার জন্যই আসবে। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। আর এককভাবে যদি কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাহলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমি চিন্তা করছি নতুন প্রজন্মকে নিয়ে। আমাদের শিশুরা স্কুলে যায়, দুপুরে খেয়ে-দেয়ে ঘুমায়, বিকালে টিচার আসে। খেলাধুলার কোনও জায়গা নাই। মোবাইল নিয়ে তারা বসে থাকে। তাই আমি চিন্তা করেছি-প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে যদিও খেলার মাঠ করা সম্ভব নয়, যেখানে সরকারি অনেক জায়গা আছে; চেষ্টা করবো ছোট হোক বড় হোক যদি খেলার মাঠ করে দেওয়া যায় তাহলে আমাদের শিশুরা সেখানে গিয়ে খেলতে পারবে। কিশোর গ্যাং এর কথা বলা হয়। আজকে যুবসমাজ মাদকাসক্ত হচ্ছে। কেন হচ্ছে? তারা আসলে কোনও ভালো পরিবেশ পাচ্ছে না। যদি সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে তাদের ধাবিত করতে পারি তাহলে অনেকাংশে আমাদের যুবকদের সেখান থেকে সরিয়ে আনতে পারবো। তাই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় যতটুকু পারা যায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার একটা চিন্তা-ভাবনা আমার আছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আজ যেটার বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করছি এবং বিভিন্নভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি সেটা হচ্ছে সন্ত্রাস। আমি নিজেও সন্ত্রাস পালি না, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেই না। সাধারণ মানুষ একবেলা না খেয়ে থাকলেও শান্তিতে থাকতে চায়। তাই সন্ত্রাস ও মাদকের ব্যাপারে আমি কঠোর অবস্থানে যাবো। আমি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসবো। তাদের বলবো-এই চট্টগ্রামের মানুষ নিরাপদে থাকতে চায়। অনেক প্রভাবশালী এই সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে। সে ব্যাপারে আমার অবস্থান কঠোর। যতই প্রভাবশালী হোক না কেন-আপনাদের সঙ্গে আপনাদের নির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আছে। আমিই সব মোকাবেলা করবো।
৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ ভোট পেয়ে আগামি পাঁচ বছরের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্য হন। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৭০-১৯৭১ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ১ নম্বর সেক্টরের বিএলএফ এর মাধ্যমে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৭৩-১৯৭৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যয়নকালীন সময়ে সামরিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। ১৯৮০ সালে মহানগর যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৭-২০০৬ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, ২০০৬-২০১৪ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
১৯৫৩ সালে চান্দগাঁও থানার পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী জমিদার বংশ বহদ্দার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। তার পিতা মরহুম হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। দাদা ছালেহ আহমদ ছিলেন খ্যাতিমান আইনজী ও ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত কমরেড ব্যাংকের (বর্তমানে বিলুপ্ত) প্রতিষ্ঠাতা। বড় ভাই অধ্যাপক সুলতানুল আলম চৌধুরী ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক রেজাউল করিম চৌধুরীর বড় মেয়ে তানজিনা শারমিন নিপুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।