৩৭দফা ইশতেহার বাস্তবায়নে কর্মসূচী নির্ধারনের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
আজ রবিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ মত বিনিময় সভায় শিক্ষা উপ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল,কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, শফিকুল ইসলাম ফারুক, চন্দন ধর, নবনির্বাচিত কাউন্সিলর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ক্লাবেরসাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, সিনিয়র সহ সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।
এ ছাড়াও সিনিয়র সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, জসিম চৌধুরী সবুজ, মোস্তাক আহমেদ, শামশুল হক হায়দারী, নির্মল চন্দ্র দাশ, আসিফ সিরাজ, ক্লাবের সহ সভাপতি স ম ইব্রাহিম, কার্যনির্বাহী সদস্য মোয়াজ্জেমুল হক, শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, মনজুর কাদের, দেবদুলাল ভৌমিক প্রমুখ এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মত বিনিময়কালে রেজাউল করিম চৌধুরী ইশতেহারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং বাস্তবায়নে সকলের মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর সমস্যা বলতে যে বিষয় গুলো আগে চলে আসে তা হল, জলাবদ্ধতা, যানজট, সন্ত্রাস, মাদক, দখল, দুষন, ক্রীড়া ও বিনোদনের সুযোগের স্বল্পতা, মশকের উপদ্রব, স্বয়ং সম্পূর্ণ ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের স্বল্পতা ইত্যাদি।
এ সকল সমস্যার ৬০ভাগেরও বেশী সমাধান কেবল নাগরিক সচেতনতার মাধ্যমেই হতে পারে। আর, একটি সচেতন নাগরিক সমাজ গঠনে সাংবাদিকদের লেখনী সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নাগরিক সচেতনতা, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ এবং উদ্যোগ বাস্তবায়নে সমম্বয়, সাহস, উদ্যম, আন্তরিকতা, সততা, নিষ্ঠা, শ্রম ও মেধা যুক্ত হলে যে কোন সমস্যাকে সহজেই দুর করা সম্ভব।
প্রকট সমস্যাগুলো দুরীকরণে সম্ভাবনা দিক তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের প্রতি আন্তরিকতা ও স্বল্প, মধ্যম, দীর্ঘ মেয়াদে গৃহিত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন এবং চট্টগ্রাম নগরবাসীর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামে প্রায় ১০হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ নানা পর্যায়ে চলমান রয়েছে। উপযুক্ততা বিবেচনায় প্রকল্পগুলো সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের দায়িত্ব বন্টন করেছেন উন্নয়নের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ সমস্ত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে যে সকল বাধা রয়েছে সেগুলো দ্রুত অপসারনে সিটি কর্পোরেশন তার আওতায় থেকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে।
বেদখল হয়ে যাওয়া খালের অংশ উদ্ধার করতে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থায় যাওয়ার কথা উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, দখলদার যতই প্রভাবশালী হোক কঠোর হাতে দমন করা হবে। সাংবাদিক ভাইদের এ কাজে আমার পাশে চাই।
যানজট নিরসনে ফ্লাই ওভার নির্মানের সুফল এখন মানুষ পাচ্ছে এটি অস্বীকার করা যাবেনা মন্তব্য করে তিনি বলেন চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের কাজ শেষ হলে যানজট আরো কমে আসবে। এ ছাড়া দুরের যাত্রীদের জন্য মেট্রো রেল সার্ভিস করা যায় কিনা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণেও যানজট বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলমান উন্নয়ন কাজকে আরো দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা হবে। আর একই কাজ বার বার ও সারা বছর ধরে যাতে করতে না হয় সে ব্যাপারে সকল সেবা সংস্থাকে এক ছাতায় আনতে কাজ করবে কর্পোরেশন।
পরিবেশ ও শহরের স্বাভাবিক সৌন্দর্য রক্ষার ক্ষেত্রে কঠোর প্রশাসনিক অবস্থান থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন পাহাড়, নদী, সমুদ্র সমম্বয়ে গঠিত চট্টগ্রাম প্রকৃতির অপার দান। এ দানকে ধ্বংস করলে প্রজন্মের কাছে আমরা দায়ী হয়ে যাব। সকলকে সচেতনতার পরিচয় দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রেখে, প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন কাজ করতে হবে।
কিশোর তরুন তরুনীরা যাতে বিপথে না যায়, যাতে সুস্থ মানসিকতার বিকাশ হয় তার জন্য যথাসম্ভব ক্রীড়া ও সুস্থ সাংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রের পাশাপাশি বিনোদনের সুযোগ তৈরী করা হবে। আর সন্ত্রাস, মাদক, দুর্ণীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, রাহাজানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সর্বোচ্চ কঠোরতা নিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দেয়ার কথাও জোর দিয়ে বলেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত আকারে মোগল আমল থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং মহান মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতার যুদ্ধে চট্টগ্রামের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসের দিক তুলে ধরে প্রজন্মের এসব স্মৃতি চিহ্ন উদ্ধার ও রক্ষনাবেক্ষনের উপর গুরুত্ব দিয়ে সাংবাদিক ও গবেষকদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানান সহযোগীতা চান রেজাউল।
শেষে এক কথায় তিনি বলেন, সকল শ্রেণী পেশার মানুষ, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমম্বিত উপায়ে একটি নতুন ধারা রচনা করতে চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর হবে স্বপ্নের বাণিজ্যিক ও পর্যটন মহানগরী।