চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে ঢাকায় বসবাসরত চট্টগ্রামবাসীর একটা লবিং গ্রুপ থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের পরামর্শক কমিটির সদস্যরা।
আজ সোমবার সকালে তাঁরা প্রশাসকের সাথে এক জুম কনফারেন্সে মিলিত হন। কনফারেন্সে প্রশাসক সুজন সভাপতিত্ব করেন।
বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড.আবদুল করিম, জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, শিক্ষাবিদ হসিনা জাকারিয়া বেলা, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টিমের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির কর্মকর্তা আকরাম খান, প্রকৌশলী প্রবীর সেন, স্থপতি আশিক ইমরান, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য কমোডর জোবায়ের, মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া।
চসিক প্রশাসক বলেন, জুম কনফারেন্সে অংশগ্রহনকারী পরামর্শক কমিটির সকল সদস্য ৬ মাসের দায়িত্বে চট্টগ্রাম নগরীতে যে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছেন, তা সকলের জন্য অনুসরনীয় হয়ে থাকবে।
পরামর্শক কমিটির সকল সদস্য প্রশাসককে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁর এই কর্মযজ্ঞের সাথে তাদের সম্পৃক্ত করায়।
সভাপতির বক্তব্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেন,স্বল্প সময়ের মেয়াদকালে আমি চেষ্টা করেছি চট্টগ্রাম নগরীকে পরিচ্ছন্ন,পরিবেশবান্ধব, মানবিক ও চিত্তের শহরে পরিণত করতে। আমি সকল কর্মকাণ্ডে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি। সফলতার বিচার ভার নগরবাসীর হাতে। চসিকের সকল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সকল গণমাধ্যম কর্মীরা আমাকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। তারা পাশে না থাকলে আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব হতো না।
তিনি বলেন, আমি সৌভাগ্যবান একঝাঁক যোগ্য মানুষকে আমার পরামর্শক হিসেবে পেয়েছিলাম। প্রশাসক ৫ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচিত মেয়রের হাতে দায়িত্ব ভার অর্পণ করার আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. আবদুল করিম প্রশাসকের এই পরামর্শক কমিটি রাখা না রাখার বিষয়ে নব নির্বাচিত মেয়রের সাথে ব্যক্তিগতভাবে প্রশাসককে আলাপ করার বিষয়ে মতামত দেন। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর সার্বিক পরিবর্তনে প্রশাসক যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তার প্রতিফলন নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছে বলে উল্লেখ করেন। ড. করিম প্রশাসকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে নব নির্বাচিত মেয়রকে তাঁকে সাথে নিয়ে কাজ করার পক্ষে মত দেন।
শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া বেলা বলেন, জনগণের জন্য কিছু করতে হলে জনগণের সাথে মিশে যেতে হয়। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনি সেই কাজ সফলভাবে করতে পেরেছেন। আপনি চসিকের শিক্ষা বিভাগে যে অব্যবস্থাপনা দেখেছেন আশাকরি নব নির্বাচিত মেয়র অপ্রয়োজনীয় কলেজগুলো বন্ধ করে পাশ্ববর্তী কলেজের সাথে একত্রিকরণ করে পরিচালনার ব্যবস্থা নিবেন। এতে কর্পোরেশন আর্থিকভাবে সাশ্রয় হবে।
দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত নব নির্বাচিত মেয়রের জন্য প্রশাককে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ রেখে যাওয়ার মত দেন। তিনি বলেন, প্রশাসক হিসেবে আপনি প্রমান করেছেন উদ্যোগী ও আন্তরিক হলে অল্প সময়েও ভাল কাজ করা যায়। বিজি এমইএ নেতা এম ছালাম চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে প্রশাসককে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে তাঁকে আগামীতে আরো উচ্চ পদে দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আপনার দেখানো পথ অনুসরণ করলে নব নির্বাচিত মেয়রও সফল হবেন।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান চট্টগ্রামে প্রশাসকের ৬ মাসের দায়িত্বকালে নগরীতে অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে বলেন, নতুন নির্বাচিত মেয়রসহ সব মহলের নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ গুলোকে খেলার উপযোগী করার উদ্যোগ নিতে বলেন। তিনি প্রয়োজনে নগরীর খেলার মাঠের সংস্কারে সরকারি সহয়তাসহ,বাফুফে ও বিসিবি থেকে উন্নয়নে সহযোগিতা করা যায় বলে ঊল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা কমোডর জোবায়ের বলেন, প্রশাসক সুজন দেখিয়েছেন কিভাবে স্বল্প সময়ে সৃষ্টিশীল কাজ করতে হয়। প্রশাসক সুজনের মধ্যে নেতৃত্বের সবগুণ আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। কমোডর জোবায়ের বলেন, পরামর্শক কমিটির সদস্যরা সোচ্চার ছিল বলে নগরীতে প্রশাসকের দায়িত্বকালে দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে।
প্রকৌশলী প্রবীর সেন বলেন, প্রশাসক স্বল্প সময়ে অনেকটাই সফল। তবে নগরীর যানজট, হকার সমস্যা যত্রতত্র ভ্যানগাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার সমস্যার সমাধান হলে চট্টগ্রাম নগরী আরো সুন্দর হতো। তবে প্রশাসক এসব সমস্যা চিহ্নিত করে যে কাজ শুরু করেছেন তা, আশাকরি নতুন নির্বাচিত মেয়র সম্পন্ন করবেন।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর ওয়াসার পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ওয়াসাকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ প্রায় ৩০-৪০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য প্রতিদিন হালদাতে গিয়ে পড়ে কর্ণফূলীর পানিকে দূষিত করছে। তাই এই দূষণ ঠেকাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে ওয়াসাকে। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পাশের ও চকবাজার সিরাজদৌল্লা রোডের ব্রিজের নির্মাণ কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করার মতামত দেন। কারণ এই এলাকাগুলো জনবহুল ও ব্যস্ততম এলাকা। তিনি সরকারি সুফল গুলো জনগণ পাচ্ছে না দেখে তা ফিরিয়ে দিতে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে বলেন।
স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন কাজের মাধ্যমে অল্প সময়ের জন্য হলেও স্থায়ীভাবে আমাদের মনে আসন করে নিয়েছেন। দেশে তাঁর মত মেধাবী ও ভিশনারী রাজনৈতিক নেতার অভাব রয়েছে। তিনি হাতে কলমে দেখিয়েছিলেন কিভাবে কাজ করতে হয়। আমরা চাই আগামীতেও তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে রক্ষা করার চেষ্টা করতে।