কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হিসেবে দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। খাদ্যের জন্য যেন হাত পাততে না হয়। খাদ্যের যেন অভাব না হয়। অন্য দেশকে যেন সাহায্য করতে পারি। জাতির জনকের স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করতে পারি সেভাবে উৎপাদন করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রকাশিত ‘১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে তিনি এ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ কৃষিনির্ভর। আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। আমরা এ কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জন্য কৃষককে যন্ত্রপাতি দিয়েছি। ৭০ হাজার যন্ত্রপাতি কৃষকদের দেয়া হয়েছে। বিশাল অঙ্কের টাকাও দিয়েছি। যখন যা প্রয়োজন দিয়েছি, কৃষি ও কৃষকের জন্য যা লাগবে দিব।
তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত আবিস্কারের বিকল্প নেই। এ জন্য গবেষণা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা গবেষকদের প্রণোদনা দিতে চাই। প্রণোদনা দেয়ার উপায় বাতলে দিতে কৃষি বিজ্ঞানীদের আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন নতুন কৃষি পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাত করে নিজেদের বাজার ধরে রাখতে হবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বাইরেও রফতানি করতে হবে। এ জন্য স্বল্পখরচে বেশি ফলদায়ক পণ্য আবিস্কার ও চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে। এ জন্য গবেষণাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বাড়াতে বিজ্ঞানীদের প্রণোদনা দিতে চাই। এ জন্য আমি উপায় খুঁজেছি, পাইনি। আপনারা এ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের (বিজ্ঞানী) উদ্ভাবনের জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের উদ্ভাবনের অতিগুরুত্বপূর্ণ ১০০টি জাত নিয়ে এটলাস প্রকাশ করেছেন, একটা ভালো উদ্যোগ। এটি ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে। অন্যরা উপকার পাবে।
এ সময় তার সরকারের কৃষি উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের কৃষিক্ষেত্রে যে উন্নয়ন, তার শুরুটা জাতির পিতাই করে গেছেন। বীজ তিনিই বপন করেছেন। আমরা ১৯৯৬ ক্ষমতায় এসেও সে কাজ চলমান রেখেছি। এখনো সে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষির উন্নয়নে নানা আইন, অর্থ বরাদ্দ, গবেষণাগার ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি।
জাতির পিতা বলেছেন, আমার মাটি এত উর্বর সেখানে বীজ পড়লেই গাছ হয়, ফল হয়। এই জায়গার মানুষ কেন না খেয়ে থাকবে? আমিও বলেছি, কোনো এলাকায় কোন ফল ভালো হয়, এর একটা ম্যাপিং প্ল্যান দরকার। এখানে অল্প খরচে একেক এলাকায় একেক ফল ভালো হতে পারে। অল্পখরচে অধিক লাভবান হব, এমন কিছু পণ্য গবেষণা করে বের করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলকার মাটির উর্বরতা, পানির সরবরাহ, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবেশ বিবেচনায় একটা ভালো গবেষণা করে পরিকল্পনা করা দরকার।
তিনি বলেন, করোনায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে আমরা সাহায্য দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এ করোনায় কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে ধান কাটিয়ে বাড়িতে তোলারও ব্যবস্থা করেছি। আমাদের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সারাদেশে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কৃষিবিষয়ক গবেষণায় সাফল্যের জন্য বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞানীদের জন্য কিছু করা দরকার। এটা কীভাবে করা যায় তার জন্য আপনাদের পরামর্শ চাই। আমি সব কিছু করতে চাই। খাদ্য উৎপাদন যে বাড়ছে এটা গবেষণার ফসল। গবেষণা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি চাই।
তিনি বলেন, গবেষণার সঙ্গে যারা জড়িত, এটা দীর্ঘ সময় ধরে করতে হয়। সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও গবেষণা শেষ হয়ে যায় না। তবে গবেষণাটা কীভাবে চালিয়ে যেতে পারেন সেটা ভাবতে হবে। আমি বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে কথা বলেছি, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। কারণ গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার পিয়ন-আর্দালিসহ সবাইকে তো আর সেই সুযোগ দেওয়া সম্ভব না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়েছি। ইনস্টিটিউটগুলোতে কীভাবে আরও সুযোগ দেওয়া যায় তার পরামর্শ চাই আপনাদের কাছে।
প্রধানমন্ত্রী পতিত জমি, খাল-বিল, সমুদ্রসীমা কীভাবে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে গবেষণার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা শব্দ দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যের বাজার কখনও সংকুচিত হবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে, চাহিদার সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করা যায় তা ভাবতে হবে। বিভিন্ন প্রযুক্তি দিয়েই ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে। সব সবজি উৎপন্ন হচ্ছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফ্রুট উৎপন্ন হচ্ছে। তবে আমাদের দেশের জিনিসগুলোর আরও বেশি স্বাদ। গবেষণা করতে গিয়ে অরিজিনাল ফলটা যেন হারিয়ে না যায়।