অনলাইনে কেনাকাটা এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বছর ২০২১

404

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অন্য সবকিছুর মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা (এসএমই) ও বড় বড় ব্যবসার জন্য চ্যালেঞ্জ বয়ে নিয়ে এসেছে। দোকান ও মার্কেটগুলোতে একসময় প্রচণ্ড ভিড় থাকলেও এখন সেগুলো একেবারে ফাঁকা।

Advertisement

বাংলোদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, মহামারির আগে অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ওই অ্থবছরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার ছিল ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। এরপর করোনা মহামারি ব্যবসার পুরো চিত্র পাল্টে দিয়েছে। এ সময়ে বিদ্যমান ব্যবসাগুলোকে নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি টিকে থাকতে তাদের বিকল্প উপায়ও বেছে নিতে হয়েছে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশে লকডাউন শুরু হয়। এ সময়ে সবকিছু বন্ধ থাকলেও সচল ছিল ইন্টারনেট। লকডাউনের শুরুতে যখন ভোক্তারা অনেক সমস্যায় জর্জরিত তখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো আশীর্বাদরূপে সামনে এলো। বিনোদন থেকে ব্যবসা, প্রতিটি খাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যবহার ব্যাপক বেড়ে যায়। ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় নতুন ও পুরাতন এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তাদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সাড়া পেতে লাগলো।

বিশ্বাস বাড়ছে অনলাইন কেনাকাটায়

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) গবেষণা মতে, মহামারির সময় অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে ৭০-৮০ শতাংশ। বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসার দ্রুত বিকাশের প্রধান উদাহারণ হলো অনলাইনে নিত্যপণ্য বিক্রি বেড়ে যাওয়া, যার সবচেয়ে বেশি প্রসার হয়েছে লকডাউনের সময়। লাইটক্যাসেল পার্টনার এর তথ্যমতে, লকডাউনের সময় বাংলাদেশে অনলাইনে নিত্যপণ্যের প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যাপক প্রসার হয়েছে।

দেখা গেছে, এ সময়ে মোটামুটি পরিচিত নিত্যপণ্যের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে দিনে ৫ হাজার বেশি অর্ডার এসেছে এবং প্রতিটা অর্ডারের পরিমান গড়ে এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৭৫০ টাকা হয়েছে। দিনে দিনে ভোক্তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে বাজার করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতে শুরু করেছে, যা অনেক নতুন-পুরাতন ব্যবসায়ীদের আশা দেখিয়েছে। ভোক্তাদের খরচের প্যাটার্ন পরিবর্তন হওয়ায় অনেক ছোট-বড় ব্যবসা এই চ্যালেঞ্জিং সময়েও টিকে গেছে। ভোক্তারা এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর উপর একটু বেশী নির্ভরশীল এবং অনলাইন থেকে শপিং করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।

জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেটের আকার ছিল ১৪ হাজার কোটি টাকা বা এক হাজার ৬৪৮ মিলিয়ন ডলার, ২০২০ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ২ হাজার ৭৭ মিলিয়ন ডলারে। আর ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে ২৬ হাজার কোটি টাকা বা ৩ হাজার ৭৭ মিলিয়ন ডলারে। সুতরাং আশা করা যায় আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনলাইন কেনাকাটা মূল ভূমিকা পালন করবে।

নতুন বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ই-কমার্সকে এগিয়ে নেওয়ার নতুন সুযোগ লকডাউন শুধু বাংলাদেশের মানুষকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের গুরুত্বের বিষয়ে শিক্ষা দেয়নি, বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যবসার সুযোগ আছে সেটাও ব্যবসায়ীদের দেখিয়ে দিয়েছে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিডেটেড এর মাসিক রিভিউয়ের তথ্যানুযায়ী, শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেই নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন প্রায় ৩ লাখ উদ্যোক্তা।

অনলাইনে কেনাকাটার এই প্রবণতায় বাড়তে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের চাহিদা বাড়বে। মূলত টার্গেট অডিয়েন্সের বিষয়ে ভালো বোঝাপড়া এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সফল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করা যেতে পারে। ই-ক্যাব-এর তথ্য মতে, অনলাইন ক্রেতারা মূলত শহরকেন্দ্রীক, যার ৮০ শতাংশই ঢাকা, গাজীপুর এবং চট্টগ্রামের। যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মানুষের সময় কাটানোর হার বাড়ছে, তাই করোনা পরবর্তী সময়ে ভোক্তাদের অনলাইনেই পাওয়া যাবে। মহামরির সময়ে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে কেনাবেচা শুরু করছে। সেক্ষেত্রে অধিক ক্রেতা পেতে এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোই বেশি ব্যবহার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যেহেতু আমরা নতুন বছরে পদার্পণ করেছি সেহেতু এটা পরিষ্কার যে, আমাদের কেনাকাটা করার অভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে। আর ব্যবসার ধরণই হলো কাস্টমারদের চাহিদা অনুসরণ করা এবং উপর্যুক্ত ও মানসম্পন্ন পণ্য পেতে কাস্টমারদের সহায়তা করা, যা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে।

আগে যদি কেউ ফেসবুকে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে চাইতেন তাহলে তাকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশী মুদ্রা এনডোর্স করার মতো ঝামেলা পোহাতে হতো। তারপর তিনি লেনদেন করতে পারতেন। কিন্তু বাংলাদেশে ফেসবুক অনুমোদিত সেলস পার্টনার এইচটিটিপুল’র যাত্রা শুরুর পর থেকে এই প্রক্রিয়া একেবারে সহজ হয়ে গেছে। এইচটিটিপুল বিজ্ঞাপণদাতা এবং ব্র্যান্ডগুলোকে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে সহায়তা করে, যেমন: স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ এবং ফেসবুকে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে কনসালটেন্সি বা পরামর্শ দেওয়া।

যেহেতু ব্যবসাগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে ডিজিটাল পথেই অগ্রসর হচ্ছে তাই তাদের আশা ও চেষ্টা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

Advertisement