ঘটনা-১:
২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে জাকির হোসেন ব্যাপারি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ঢাকার তেজগাঁও থানার পুলিশ। জাকির হোসেন তথ্য-পরিচয় গোপন করে—প্রতারণা করে ২৮৬টি বিয়ে করেছেন। এই বিপুল সংখ্যক বিয়ে করার জন্য তিনি ১৪ বছর সময় নিয়েছেন।
ঘটনা-২:
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে কাজি মো. আনিচুর রহমান জানান—পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে মিন্নির সঙ্গে বিয়ে হয় নয়নের। এরপর বিয়ের বিষয়টি গোপন করে রিফাত শরীফের সঙ্গে কুমারী পরিচয়ে মিন্নির বিয়ে হয়।
ঘটনা-৩:
সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফিনিশার হিসেবে খ্যাত নাসির হোসেন বিয়ে করেছেন তামিমা সুলতানা শবনমকে। তামিমার পূর্বের স্বামীর নাম রাকিব হাসান। তাকে ডিভোর্স না-দিয়ে আবারো বিয়ে করায় আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। এই ইস্যু নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেছেন রাকিব।
প্রতিটি ঘটনাই আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। আসুন জেনে নেই, এই সম্পর্কে আইন কী বলে?
বিয়ে সংক্রান্ত অপরাধসমূহের সংজ্ঞা ও দন্ড সম্পর্কে দন্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ ধারা পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ আইনের ৪৯৪ ধারা অনুসারে, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পুনরায় বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উক্ত ধারা মোতাবেক, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় পুনরায় বিয়ে করলে, তা সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এবং এই অপরাধ প্রমাণিত হলে, প্রতারণাকারী স্বামী বা স্ত্রী সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে।
তবে, এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যদি স্বামী বা স্ত্রী ৭ বছর পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকেন এবং জীবিত আছে মর্মে কোন তথ্য না-পাওয়া যায়—এমন পরিস্থিতিতে পুনরায় বিয়ে করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। এছাড়া কোন স্বামী বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের অনুমতি নিয়ে বিশেষ কোন কারণ দেখিয়ে বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে সালিসি পরিষদের কাছে আবেদন করলে সালিসি পরিষদ তা যাচাই সাপেক্ষে, পরবর্তী বিয়ের অনুমতি দিতে পারে। সেক্ষেত্রে পুনরায় বিয়ে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে, প্রতারণার মাধ্যমে যদি পুনরায় বিয়ে করে তবে যাকে প্রতারণা করে বিয়ে করা হল—তিনি অভিযোগ করলে তা ৪৯৫ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। আবার কেউ জেনে শুনে, অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলে উক্ত বিয়ে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা মোতাবেক সম্পূর্ণ বাতিল বিয়ে। এক্ষেত্রে, তা দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা মোতাবেক ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণ হলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড হতে পারে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সাধারণতঃ ডিভোর্স কার্যকর হতে ৩ মাস সময় লাগে। তাই শুধু ডিভোর্স দিলেই হবে না—ডিভোর্স কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় বিয়ে করার সুযোগ নেই।
মামলা কোথায় করবেন?
বিয়ে সংক্রান্ত অপরাধসমূহের শিকার হলে, সরাসরি আদালতে মামলা করতে হবে। এক্ষেত্রে, মামলার প্রমাণ হিসেবে, বিয়ের কাবিননামা ও অন্যান্য প্রমাণাদি সাথে জমা দিতে হবে এবং আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। মামলা চালানোর সামর্থ্য না থাকলে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের নিকট আবেদন করতে হবে ।