করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এক বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ৩০ মার্চ স্কুল ও কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সচিবালয়ে শনিবার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এই সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ৩০ মার্চ থেকে খুললেও সব শিক্ষার্থী প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে না। আর পুরো রোজায় ছুটি এবার থাকবে না।
বাংলাদেশে করোনাভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে কওমি মাদ্রাসা খুললেও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও ‘ছুটি’ চলছে।
মহামারীর প্রকোপ কিছুটা কমে আসায় এবং এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির কথা বিবেচনা করে গত ২৩ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রস্তুতি নিতে বলেছিল।
তার মধ্যে বিভিন্ন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামলে সম্প্রতি জরুরি এক বৈঠক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রোজার ঈদের পর ২৪ মে খোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
এখন স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তও হল এবং সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আগেই খুলছে।
দীপু মনি বলেন, “প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরা আগামী মার্চ মাসের ৩০ তারিখ থেকে খুলে দেব।
“সেখানে আমরা আগেও যেভাবে বলেছি যে, হয়ত পর্যায়ক্রমে, একদম প্রথমে প্রাথমিকে যারা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত, তারা হয়ত প্রতিদিনই আসবেন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দশম ও দ্বাদশ প্রতিদিন আনব। বাকিগুলো হয়ত প্রথমে সপ্তাহে একদিন আসবে, তারপর থেকে সপ্তাহে দুইদিন করে আসবে। তারপর পর্যায়ক্রমে আমরা স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে যাব।”
প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় আপাতত খুলছে না বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য যে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার কার্যক্রম, তা এর মধ্যে শেষ হবে।
স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে কি না, তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা সেগুলো দেখবে, তার উপর নজর রাখবে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “শিক্ষকদের রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টা পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাথে শিক্ষা বিভাগ যৌথভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে করবে।”
শিক্ষকদের টিকা প্রদানে সহযোগিতা করতে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানোর কথাও জানান তিনি।
“টিকার সংখ্যা যত বাড়তে থাকবে, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি একদম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া তত দ্রুততার সাথে করা সম্ভব হবে।”
রোজায় খোলা
মহামারীতে ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে এবার রোজায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
“পুরো রোজায় শিক্ষার্থীদের ছুটি থাকবে না। কারণ একটা বছর তো বন্ধই ছিল। আর ছেলেমেয়েরা একটা বছর বাড়িতে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে, কাজেই আমার মনে হয় না যে রোজা রেখে ক্লাস করতে ওদের অসুবিধা হবে। ঈদের সময় ওদের কয়েকদিন ছুটি থাকবে।”
বিশেষ এই সময়ে এসএসসির জন্য ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসির জন্য ৮০ কর্মদিবসের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, এই সিলেবাস শেষ করেই পরীক্ষা দুটি নেওয়া হবে।
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে গতবছর পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া যায়নি।
আর অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য টিকা
দীপু মনি জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২২০টি ছাত্রাবাসের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার তৎপরতা চলছে।
তিনি বলেন, “১ লাখ ৩০৯ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাথে কথা হয়েছে আমাদের। সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইউজিসির মাধ্যমে গত বুধবার চিঠি দিয়েছি এ ব্যাপারে।
“বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সকল আবাসিক শিক্ষার্থীর নাম-ঠিকানাসহ তাদের ন্যাশনাল আইডির নম্বর আমাদের পাঠাবেন। আমরা সেটা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে দিয়ে দেব। ফলে এই আবাসিক শিক্ষার্থীরা যেখানেই থাকেন না কেন, তারা যেন রেজিস্ট্রেশন করে নিকটবর্তী কেন্দ্র থেকে টিকা দিতে পারবে।”
১৭ মে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।