সম্প্রতি প্যাকেটজাত দুধ মিল্ক ভিটার দাম লিটারপ্রতি দশ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করেছে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি। আর এই দাম বাড়ানোর কারনে অন্যান্য প্যাকেটজাত দুধেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনা মহামারী প্রকোপ চলাকালীন প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ও আসন্ন রমজানের আগে এভাবে সরকারী মালিকানাধীন মিল্কভিটার প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে এই দাম কমানোর দাবি করেছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নগর ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ।
রোববার (২৮ মার্চ) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান উপরোক্ত দাবি জানান।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির মালিকানাধীন মিল্কভিটা ২০০৯ সাল থেকে তাদের উৎপাদিত দুধের দাম এই নিয়ে আটবার বাড়িয়েছে। দাম বাড়ানোর বেলায়ও ক্ষুদ্র গ্রাহকদের প্রতি সুবিচার করেনি কর্তৃপক্ষ। দুধের প্যাকেট ছোট হলে লিটারপ্রতি ভোক্তাদেরও বেশি হারে দাম গুনতে হবে। এক লিটারের প্যাকেট ৭৫ টাকায় বিক্রি হলে আধা লিটারের জন্য দাম গুনতে হচ্ছে ৪০টাকা। আবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিল্ক ভিটার দুধ প্রাপ্যতা ও সন্তোষজনক নয়।
ক্যাব নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষের এই উপর্যুপরি দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। কারন এই দাম বৃদ্ধির সুফল খামারী পর্যায়ে যাবে না। কারন মিল্প ভিটা তাদের খামারীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। ফলে বছরের মাঝ পথে দুধের দাম বাড়ালেও খামারিরা তার সুফল পাবে না। খামারি পর্যায়ে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ প্রতি লিটার দুধ কিনছে ৫২-৫৫ টাকায়। সেখানে ভোক্তা পর্যায়ে ৭৫ টাকায় উন্নীত করার যুক্তসংগত কারন নাই।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বেসরকারি খাতের ডেইরি কোম্পানিগুলোর দুধের দাম বাড়ানোর জন্য মিল্কভিটাকে দিয়ে দুধের দাম বাড়াতে তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এটা করা হয়েছে কিনা? তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারন করোনা মহামারীতে শারিরীক শক্তি বাড়াতে চিকিৎসকরা দুধ খাবার পরামর্শ প্রদান করায় এবং রমজানে দুধের ব্যবহার বাড়ায় চাহিদা বেড়ে গেছে। এই বাড়তি চাহিদায় জনগনের পকেট কাটার উৎসবে সামিল হতে মিল্কভিটা বেসরকারি খাতের ডেইরি কোম্পানিগুলোকে পথ মশৃণ করে দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের মানোন্নয়নে সচেষ্ট না থেকে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় মেতেছে। কিছু দিন আগে আড়ং দাম বাড়ানোর পর এখন মিল্ক ভিটাও বাড়ালো। এরপর একই যুক্তিতে অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়াবে। যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় ও লাভের বিষয়টি দেখবে। মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষও দাম বাড়ানোর পক্ষে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে থাকে। কিন্তু পুরো প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবস্থাপনায় চরম অনিয়ম ও অপচয়ের খবর প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। তদুপরি প্রতিষ্ঠানটি খামারিদের স্বার্থ দেখে, সে সুনামও নেই; বরং দুধের দাম পরিশোধ নিয়ে খামারিদের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিকারে আন্দোলনও করেছেন তারা। খামারিদের কাছ থেকে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ যে দামে দুধ কেনে, প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় তার অর্ধেকের বেশি হওয়া উচিত নয়। প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি ও অপচয় কমানো গেলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি দামের বোঝা কমানো সম্ভব ছিলো।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশি গুঁড়া দুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর না দিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটতেই যেন ব্যস্ত। আর সেখানে ক্ষুদ্র ক্রেতাদের ওপরই খড়গটি বেশি করে চেপে বসেছে। যেখানে সরকার পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে নিবিড় তদারকি করছেন, সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে সরকারি উদ্যোগকে ভেস্তে দিতে পারে না। তাই অবিলম্বে মিল্ক ভিটার দুধের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার করে যুক্তিসংগত পর্যায়ে আনা দাবি জানান।