ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের রাজপথে বিক্ষোভ করার ঘোষণা এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। ঢাকায় ১০ নভেম্বর (রবিবার) এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে দলটি। তবে ওই কর্মসূচিকে ‘পূর্ণশক্তিতে’ দমন করার ইঙ্গিত দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এদিকে কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর পাশাপাশি বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অন্যদিকে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়করা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের বিষয়টি উল্লেখ করে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন শনিবার রাতে বলেন, ‘আগামীকাল (রবিবার) ঢাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামার বিষয়টি মাথায় রেখে চট্টগ্রামেও আমরা সতর্ক আছি। এখানে এরকম কোনো ঘটনা যেন না ঘটে, সেই বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে পূর্বপ্রস্ততি হিসেবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নগরের নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় আমরা নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করছি- বিষয়টি এমন নয়। নিয়মিত আমাদের যে পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন থাকে, এর চেয়ে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আমাদের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ যে পয়েন্ট রয়েছে সবগুলোতে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবো। আর চেকপোস্ট এবং পেট্রলিং কার্যক্রম নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে, রবিবার (১০ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ‘প্রতিহত করতে’ মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের সমন্বয়করা। আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে বিকেল ৩টায় নগরের চকবাজার প্যারেড কর্নারে গণজমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে তাদের ষড়যন্ত্র ও তৎপরতা চালাচ্ছে। সেটি মোকাবিলা করে আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে আছি। এখন যদি কোনো পতিত, ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে কিংবা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর, শহীদ এবং গাজীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করার তৎপরতা চালায়; আমরা তাদের বিরুদ্ধে মাঠে থেকে শক্তহাতে প্রতিহত করবো, ইনশাআল্লাহ।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেনি। এরপরও তারা যতটুকু করেছে, আশা করি দ্রুতসময়ের মধ্যে তাদের সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি যারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে তাদের সকলকে আটক করবে। যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তারা সচেষ্ট অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস করি ।’
কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার মুঠোফোনে কল করা হলেও সবকটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। দু-একজনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল ঢুকলেও তারা সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, দেশে অপশাসন চলছে অভিযোগ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ নভেম্বর রাজধানীর জিরো পয়েন্টে নেতাকর্মীদের আসার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দুটি আলাদা পোস্ট করা হয়।
পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘১০ নভেম্বর আসুন- নূর হোসেন চত্বরে জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, ঢাকা। আমাদের প্রতিবাদ দেশের মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রতিবাদ মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে। অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে আপনিও অংশ নিন।’
তবে, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘বিক্ষোভ মিছিল বা জমায়েত কর্মসূচির বিপরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর অবস্থানে নেবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘’আওয়ামী লীগ এখন একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই ফ্যাসিবাদী দলটির বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার মত কোনো সুযোগ নেই। গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সভা, সমাবেশ ও মিছিলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড অন্তর্বর্তী সরকার বরদাশত করবে না।’
প্রেস সচিবের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, ‘গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’