বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর আড়াই টায় চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে স্মরণসভা ও জুলাই বিপ্লবের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন।
উপাচার্য তার ভাষণের শুরুতে ২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন। একইসোথে শহিদ ও আহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ২৪ এর বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলনে তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর সর্বপ্রথম একাডেমিক কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। একই সাথে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। বেশ কিছু কার্যক্রম ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে এবং এর সুফল শিক্ষার্থীরা ভোগ করছেন। তিনি শিক্ষার্থীরাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা কাজ করছি ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে বিগত সময়ের ন্যায় পুলিশের জলকামান দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সুন্দর একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ পরিবেশ আরও উন্নত করতে এবং এ ক্যাম্পাসকে শান্তির নীড় হিসেবে গড়তে উপাচার্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। শহিদ দুই শিক্ষার্থীর নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে ‘বিপ্লব কর্ণার’ খোলা হয়েছে। সেখানে তাদের স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও শহিদদের নামে অচিরেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে মর্মে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আজকের এ আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহিদ দুই পরিবারকে মাননীয় উপাচার্য সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।
উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ২৪ এর গণআন্দোলনে শহিদদের স্মরণ করেন এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি আহতদের সহমর্মিতা জানান। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ছাত্রদের সাথে আমরাও রাজপথে ছিলাম। আমাদের অনেক শিক্ষক নির্যাতিত হয়েছেন এবং অনেকের বাসায় বাসায় গিয়ে হামলাও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বাংলাদেশকে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কাজটি করার জন্য প্রশাসনকে আমাদের সকলের সহযোগিতা করতে হবে। উপ-উপাচার্য বলেন, বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে লালন করে আমরা সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদগুলো গঠন করা হচ্ছে। অচিরেই দুই শহিদের নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি সরকারের প্রতি পলাতক ফ্যাসিবাদী সরকারের বিভিন্ন অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার, গুম, খুন, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অন্যায় কাজের বিচারকার্য দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করার জোর দাবি জানান।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, আজ অনুষ্ঠানের মঞ্চ আলোকিত হয়ে শোভা পাচ্ছে শহিদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতির মাধ্যমে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এজন্য তিনি তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেই শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে। তিনি আরও বলেন, যেকোনো বিপ্লবের পর ক্রান্তিকাল আসে, আমাদের ওই ক্রান্তিকাল চলছে। এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যেতে হবে। ফ্যাসিবাদী সরকার বিগত সাড়ে ১৫ বছর এ দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রেখেছিল। শিক্ষার্থীরা গণআন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে বিতাড়িত করে এ দেশটাকে আবার নতুনভাবে স্বাধীন করেছে। এ নতুন স্বাধীনতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস. এম. নছরুল কদির, চবি জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ গোলাম কিবরিয়া, চবি ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. আনোয়ার হোসেন, চবি শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. বেগম ইসমত আরা হক, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষকদের পক্ষে চবি শাহজালাল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. ফুয়াদ হাসান, চবি ইতিহাস বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. শামীমা হায়দার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন, শহিদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার পিতা রতন চন্দ্র তরুয়া এবং শহিদ ফরহাদ হোসেন এর পিতা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।
অনুষ্ঠানে ২৪ এর জুলাই বিপ্লবে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি এবং চবি তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক ড. মোঃ শহীদুল হক।
স্মরণসভা শেষে চবি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দেন।