বাংলাদেশ নিয়ে চক্রান্ত হচ্ছে এমন দাবি করে আগামী সোমবার (২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার। নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে দুপুরে জুমার নামাজ শেষে নগরের ওয়াসার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংগঠনটি। এতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও মুসল্লিরা অংশ নেন। মিছিলটি নগরের ওয়াসা মোড় থেকে দুই নম্বর গেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলে হেফাজত নেতাকর্মীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দেন। এছাড়া আইনজীবী সাইফুল হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
হেফজত নেতা হারুন ইজহার বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ভারত ও ইসরায়েল যৌথ চক্রান্ত করে যাচ্ছে। যেহেতু এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ভারত বাংলাদেশ নিয়ে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। সে জন্য আগামী সোমবার চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, সব গোয়েন্দা সংস্থাকে তথ্য দিয়ে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে শান্তিপূর্ণ যাত্রা করবো। শান্তিপূর্ণ দূরত্বে থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি দেবেন।’
এ সময় তিনি হেফাজত নেতাকর্মীদের ওইদিন বেলা ১১টার মধ্যে জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে সমেবেত হওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় ইসকন জড়িত না থাকার দাবিকে নতুন চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন হেফজাত নেতা হারুন ইজহার।
তিনি বলেন, ‘হাসিনা সরকারের পতনের পর আমাদের দেশের অনেকেই হিন্দুদের মন্দির পাহারা থেকে শুরু করে সুরক্ষার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এত উদারতা দেখানোর পরও তারা আমাদের ভাইকে গলা কেটে খুন করলো।’
ইসকনসহ হিন্দুত্ববাদী সব সংগঠন নিষিদ্ধের দাবি করে হারুন ইজহার বলেন, ‘মুষ্টিমেয় কয়েকটি সংগঠন ছাড়া হিন্দুত্ববাদী অধিকাংশ সংগঠন বাংলাদেশে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।’
তিনি জানান, ইসকনসহ বিভিন্ন সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আগামীতে হিন্দুত্ববাদী কোনো সংগঠনের সঙ্গে আলাপে বসতে রাজি নয় হেফজাত।
শর্তগুলো হলো- হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোকে ভারতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যেসব ভুয়া প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে তাদেরকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। বিভিন্ন সংগঠনে যেসব জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী ঘাপটি মেরে রয়েছে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল লড়াই ইসকন বা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে নয়। আমাদের লড়াই দিল্লির সঙ্গে। আমরা আমাদের লড়াইকে দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলামের আরেক যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস বলেন, ‘মীর্জা ফখরুল সাহেব আপনি কেবলা পরিবর্তন করুন, না হয় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। আপনার কথায় বোঝা যায় আপনি কাদেরদের একজন। আপনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভারতের প্রতি নতজানু থাকছেন, এই নীতি আমরা সমর্থন করি না।’
কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আলী ওসমানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনীর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, সেক্রেটারি রিদওয়ানুল ওয়াহেদ প্রমুখ।