‘বঙ্গবন্ধু দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের মহামানব’ : মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট

189

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দক্ষিণ এশিয়াার ইতিহাসের অন্যতম মহামানব অভিহিত করে বলেছেন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রত্যাশী মানুষের হৃদয়ে তিনি একটি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।

Advertisement

তিনি আজ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের স্থপতির জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের অন্যতম মহামানব, যার কর্মকা- বাংলাদেশের জনগণের স্বতন্ত্র নিয়তি নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।’

সলিহ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থপতি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রত্যাশীদের হৃদয়ে চিরদিন একটি সম্মানের স্থান পাবেন।’

দক্ষিণ-এশিয়ার পাঁচ নেতার অন্যতম হিসাবে দশ দিনব্যপী উদযাপন যোগ দিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সারা জীবনই গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার ‘আপোষহীন প্রবক্তা’ ছিলেন।

সলিহ বলেন, ‘তিনি প্রায়শই জোরালো কথামালায় সেই মূল্যবোধের পক্ষ নিয়েছেন, যা সর্বস্তরের মানুষের মনে অনুরণিত হয়েছিলো। তার ছয় দফা কর্মসূচি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং দেশের সংবিধানের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ রচনা করেছিলো।’

মালদ্বীপের এই নেতা বলেন, বিশেষত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তাঁর ‘দক্ষতা ও মহতী ঐতিহাসিক অবস্থান’-এর প্রমাণ, যাতে কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিলো। যে কারণে ইউনেস্কো এটিকে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে দালিলিক ঐতিহ্য হিসাবে নথিভুক্ত করেছে।

‘তার মৃত্যুও মর্মান্তিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকার বিস্মৃত হবে না’ সলিহ বলেন।
তিনি বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান এবং দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।’

সলিহ দুদেশের আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততা এবং বাংলাদেশে বসবাসরত মালদ্বীপের বাসিন্দাদের প্রতি এদেশের সুদৃষ্টি ও সদ্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে মালদ্বীপের উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমরা যে বন্ধুত্ব উপভোগ করছি তার জন্য মালদ্বীপ কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা যে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি তা মোকাবেলায় আমাদের সহায়তা করেছে। খাদ্য, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং চিকিৎসা সামগ্রী সহায়তার জন্য আমরা চির কৃতজ্ঞ।’

তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ মালদ্বীপের স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের একটি দল প্রেরণ করে এক মহান উদার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সলিহ বলেন, ‘এর আগে গত বছর বাংলাদেশের একটি মেডিকেল টিম মালদ্বীপ সফর করে। মালদ্বীপ এই সিদ্ধান্তের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, এবং আমরা এটিকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্কের প্রতিফলন হিসাবে স্বীকার করছি।’
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ-মালদ্বীপ

সহযোগিতাকে ‘বিস্তৃত’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসায় আপনাদের সহায়তার ওপর নির্ভর করে থাকি।

তিনি বলেন, ভারত মহাসাগরের নিম্নাঞ্চলের দেশ হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তন উভয় দেশের জন্য জরুরি পারস্পরিক অগ্রাধিকার হিসাবে উপস্থিত হয়েছে।

সলিহ বলেন, ‘মালদ্বীপ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামে অগ্রণী ভূমিকার জন্য এবং একটি ব্লু ইকোনমি বিকাশে প্রচেষ্টার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করি। ব্লু ইকোনোমি আমাদেরও অভিন্ন লক্ষ্য।’

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা সৃষ্ট অস্তিত্বের হুমকি মোকাবেলায় অব্যাহত সহযোগিতার জন্য তার দেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সলিহ বর্তমানে বাংলাদেশিরা মালদ্বীপের অন্যতম বৃহত্তম প্রবাসী কর্মশক্তি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের অবদান অপরিসীম।’

Advertisement