জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন সে দিকে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের প্রতি যে কোনো ধরনের বৈষম্য আইনের শাসনের পরিপন্থী। কাজেই কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন।’
শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখে উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে এবং সর্বস্তরে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে ‘৭১ এর পরাজিত শক্তি ঘাতক-দালালদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্যের বিকল্প নেই। ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে সবাইকে কাজ করতে হবে।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল মাধ্যমকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে হবে। মননে, বোধে, জীবনাচরণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বুকে লালন করে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে।’
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ২১ বছর পর ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে শুরু হয়ে এই আন্দোলনের। প্রাজ্ঞ নেতারা প্রায় ৩৩ বছর ধরে নানা চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এই সংগঠনকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছেন।কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই নয়, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই মহাসংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দিতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি আশা করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সহনশীল ও মানবিক সমাজ এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আগামী দিনগুলোতেও ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন হলেও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কাজ কখনও শেষ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভূমিকা অতীতের মতো ভবিষ্যতে উজ্জ্বলভাবে কার্যকর থাকবে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও প্রশংসা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক ও তথ্য-প্রযুক্তির নানা সূচকে বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করেছি আমরা। এই অগ্রযাত্রার পথে সরকারের সামনে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল মৌলবাদ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী নেতৃত্ব এবং জঙ্গীবাদের প্রতি তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণেই জঙ্গীবাদ দমনে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলন-২০২৪ এর সভাপতি বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলিম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানবাধিকার নেতা নির্মল রোজারিও, আদিবাসী মুক্তি মোর্চার সভাপতি অধ্যাপক যোগেন্দ্রনাথ সরেন, ন্যায় অধিকার তৃতীয় লিঙ্গ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান সমাজকর্মী আনোয়ারা ইসলাম রাণী এবং ৮ম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কাজী মুকুল বক্তব্য রাখেন।