চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঠানটুলিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ জানান, নিহতের নাম আজগর আলী বাবুল (৫৫)। এছাড়া মাহবুব নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে
উপপুলিশ কমিশনার ফারুক বলেন, পাঠানটুলি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে রাত ৮টার দিকে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। একপর্যায়ে দু’জন গুলিবিদ্ধ হলে একজন মারা যান। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘একজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তিনি গুলিবিদ্ধ ছিলেন। পরে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
নজরুল ইসলাম বাহাদুর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং পাঠানটুলি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। ২০১০ সালে তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী আবদুল কাদেরের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
নজরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘আমি মোগলটুলি এলাকায় গণসংযোগ করছিলাম। সেখানে আমি মেয়র প্রার্থী রেজাউল ভাইয়ের নির্বাচনি কার্যালয়ে কিছুক্ষণ বসি। পরে আমি নজির ভাণ্ডার লেইনে গণসংযোগ করতে যাই। হঠাৎ করে বৃষ্টির মতো গুলি শুরু করে সন্ত্রাসীরা। আবদুল কাদেররের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলার পাশাপাশি গুলিবর্ষণ করে। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বাবুল নামে আমার একজন কর্মী নিহত হয়েছেন। মাহবুব নামে আমার আরেকজন কর্মী আহত হয়েছেন।’
আজগর আলী বাবুলের ছেলে সিজান মোহাম্মদ সেতু বলেন, ‘আমার বাবা যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের পক্ষে গণসংযোগ করছিলেন। আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে সবাই দৌড়াতে থাকে। আমি আমার বাবার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবার সময় উনি বুকে গুলিবিদ্ধ হন। পরে আমরা তাকে মেহেদিবাগে ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
জানতে চাইলে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের বলেন, ‘বাহাদুর সাহেবের লোকজন গতকালও কদমতলীতে আমার পোস্টার ছিঁড়েছে। আজ (মঙ্গলবার) আমি পুলিশকে অবহিত করেই মগপুকুর পাড়ে গণসংযোগে যাই। আমি একটি ভবনের দোতলায় ছিলাম। হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ শুনি। তখন আমার লোকজন সবাই দৌড়ে চলে যায়। আমি প্রাণরক্ষায় একটি বাসায় আশ্রয় নিই। সেখান থেকে দেখি বাহাদুর সাহেবের লোকজন যাদের মধ্যে কিশোল গ্যাংয়ের সদস্য অনেকে আছেন, তারা গুলি ছুঁড়ছে। যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, তিনিও তাদের সঙ্গেই ছিলেন। পরিকল্পিতভাবে তারা একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। এরপর আমার বাসা ও গাড়ি ভাংচুর করেছে।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি সদীপ কুমার দাশ।