চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালীতে দুর্বৃত্তদের হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৬ জন পুলিশ ও ৬ জন সেনা সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে। যৌথ বাহিনীর টাস্কফোর্স-৪ চট্টগ্রাম থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহরের হাজারী গলিতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গেলে যৌথ বাহিনীর ওপর হামলার এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সেনাবাহিনীর পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওসমান আলী নামক একজন ব্যক্তির ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুকের ওই পোষ্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার ইসকন সমর্থক এবং বেশ কিছু উগ্র হিন্দুবাদ সমর্থকরা ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে হাজারী লেনে জড়ো হয়।
এ সময় যৌথবাহিনীকে খবর দেয়া হলে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ৬টি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এবং মব জাস্টিস রোধে ওসমান আলী ও তার ভাইকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করা হবে বলে উত্তেজিত জনতাকে আশ্বস্ত করা হয়।
তবে, একপর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারীরা আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠে এবং যৌথবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের দিকে ইট-পাটকেল এবং এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়ে মারতে শুরু করে। এতে সেনাবাহিনীর একজন সদস্যের শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এরপর আরও দশটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং ৬ জনকে আটক করে। পরে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে।
সেনাবাহিনী জানায়, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ৫ আগষ্টের পর পালিয়ে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক নেতার নির্দেশে পাঞ্জাবী ও টুপি পরিহিত অবস্থায় ছদ্মবেশে মন্দিরে হামলা এবং মূর্তি ভাঙ্গার এই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে বেরিয়ে আসে।
পূর্ব পরিকল্পিত এই ঘটনাটির পেছনে যুবলীগ নেতা সঞ্জিব বিশ্বাস সাজু, সাবেক কাউন্সিলর বলরাম চক্রবর্তী বলয় এবং জহর লাল হাজারীর পিএস এর নাম পাওয়া গেছে বলে জানায় সেনাবাহিনী। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকা কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপক দাসের ইশারায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে।
সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে মন্দির ও মূর্তি ভাঙার তথ্য ফাঁস হওয়ার ফলে হাজারী গলিসহ নগরীর অন্যান্য এলাকার মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।