“এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই”এই প্রতিপাদ্য নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারুণ্যের উৎসব শুরু হয়েছে। তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের ভাবনায় নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং এলজিইডি, ডিপিএইচই ও জেলা পরিষদ চট্টগ্রামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এলজিইডি ভবন হতে র্যালী বের হয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে চট্টগ্রাম এলজিইডি কামরুল ইসলাম সিদ্দিক মিলনায়তনে এক কর্মশালায় মিলিত হয়।
র্যালী পরবর্তী “তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এলজিইডি, চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী গোলাম মোস্তাফা।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এলজিইডি চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার মোঃ নোমান হোসেন, ডিপিএইচই চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস, জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামরুজ্জামান, উপজেলা প্রকৌশলী (পটিয়া) কমল কান্তি পাল এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) চান্দগাঁও ইউছুপ হাছান ।
এছাড়াও কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন হতে তেলাওয়াত পাঠ এবং জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী গোলাম মোস্তাফা বলেন, তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে চাই তারুণ্যের শক্তিতে এদেশে আসবে টেকসই মুক্তি, অর্জিত হবে সাম্য এবং মানবিক মর্যাদার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। তাই আজ সময় এসেছে তারুণ্যের ভাবনায় বাংলাদেশ বির্নিমাণের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান দুর্বল হয়ে গেলেও তারা ঘুরিয়ে দাড়িয়েছে। তাই ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে নিজেদের উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে। এই কর্মশালার মাধ্যমে তরুণরা এই উৎসবের মাধ্যমেই দেশ গড়বে। দেশ গড়ার জন্যই আমরা এই তারুণ্যের উৎসবের আয়োজন করেছি।
তিনি বলেন, সমাজ বিনির্মাণে তরুণরা ভূমিকা রাখবে। তারা পড়াশুনায়, সমাজ সংস্কার, সমাজের ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধনে মনযোগী হবে এবং সেগুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরবে। সে অনুযায়ী রাষ্ট্র এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আজকের তরুণ সমাজরা হচ্ছে আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশের কর্ণধার। তাদের সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার নানামুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ফরিদা খান বলেন, প্রতিযোগীতায় জয়-পরাজয় থাকবে, তবে প্রতিযোগীতার অংশগ্রহণটাই আসল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তরুণ শিক্ষার্থীরা মাঠে জিতবে কিনা জানতো না, কিন্তু তারা জয়ের টার্গেট নিয়ে মাঠে ছিল। তাই তরুণদের লক্ষ্য ঠিক থাকলে জয় আসবেই। তরুণরা আগামী দিনে বাংলাদেশ যেমন চাইবে, সেভাবে দেশটা এগিয়ে যাবে। তরুণদের আগামীতে আমাদের আসনটা ছেড়ে দিবো, তরুণরা সেটা পালন করবে। সেভাবে তোমরা শিক্ষা ও কর্মের মাধ্যমে তৈরি হতে হবে। আমরা তরুণদের দিয়ে আগামীতে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে চাই।
চট্টগ্রামের সকল উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে বিজয়ী শিক্ষার্থীরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
সভায় বক্তারা বলেন, দেশে তারুণ্যের শক্তি অপার সম্ভাবনাময়। এই শক্তিকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা গেলে দেশ এগিয়ে যাবে। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
শিক্ষার্থীরা কর্মশালায় প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেশের ট্যুরিজমের সুযোগ ও সমস্যা, নাগরিকের অধিকার, ভোটিং সিস্টেম বিকেন্দ্রীকরণ, নির্বাচনে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অংশগ্রহণ, সঠিক সংবিধান গঠন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, কোটামুক্ত চাকরি, বাস ও বিমান টিকেট সহজলভ্য, কৃষিতে উন্নতি, কৃষকদের ন্যায্য দাম, ট্রাফিক আইন, ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা উন্নতিকরণ, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, সুশাসন নিশ্চিন্তকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন।
কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের মধ্য ‘সেরা আইডিয়া’ উপস্থাপনের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে সাতকানিয়া উপজেলা প্রথম স্থান, সন্দ্বীপ উপজেলা দ্বিতীয় স্থান এবং লোহাগাড়া উপজেলা তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে এবং পৌরসভা পর্যায়ে রাউজান পৌরসভা পর্যায়ে রাউজান পৌরসভা প্রথম স্থান, সাতকানিয়া পৌরসভা দ্বিতীয় স্থান এবং মিরসরাই পৌরসভা তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
এতে অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট প্রদান করেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
চট্টগ্রাম প্রশাসনের আয়োজনে তারুণ্যের উৎসবে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), চট্টগ্রাম, জেলা পরিষদ এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) চট্টগ্রাম।