চট্টগ্রাম আউটার রিং রোডের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পানি প্রবাহের বিভিন্ন খালের মুখে অপরিকল্পিতভাবে দেয়াল নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বৃহত্তর হালিশহরবাসী। আজ শনিবার (১৩ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বলেন চট্টগ্রাম শহরকে একুশ শতকের উপযোগী করে গড়ে তুলে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত শহরের পর্যায়ে রূপান্তরিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক বৃহৎ বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্ধ প্রদান করছে। ঠিক তেমনি একটি প্রকল্প হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড সড়ক যার নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তের পথে। এর পাশাপশি বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প এবং বে টার্মিনাল প্রকল্পের কাজও চলমান। এ দুটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হলে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব পৃথিবীর অন্যান্য আধুনিক শহরকেও ছাড়িয়ে যাবে। একদিকে টানেল, অন্যদিকে বে টার্মিনাল, অপরদিকে আউটার রিং রোডসহ নয়নাভিরাম বিনোদন কেন্দ্রে চট্টগ্রামবাসী যেন সিঙ্গাপুরের ছোঁয়া পাবে। সরকারের এতগুলো উন্নয়ন প্রকল্প যখন চলমান ঠিক সেই সময়ে আউটার রিং রোডের পূর্বপাশে অবস্থিত পতেঙ্গা, হালিশহর টু কাট্টলীবাসীর বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আউটার রিং রোডের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন অন্ততঃ পাঁচটি খালের স্লুইসগেটের পানি নিষ্কাশনের প্রবেশ মুখে বে টার্মিনালের সীমান দেয়াল নির্মাণ করছে সংস্থাটি। এর ফলে নগরীর বিশাল এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হতে পারে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। আর এতে করেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ঐ এলাকায় বসবাসরত লাখো লাখো অধিবাসী। ইতিমধ্যে স্লুইসগেটের মুখ বন্ধ করে বে টার্মিনালের সীমানা দেয়াল নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অপরিকল্পিত এ নির্মাণ কাজ বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর পাশাপশি বিভিন্ন সংবাদপত্রও আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার আশংকা করে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করেছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন ওমরাহ পালনের জন্য বর্তমানে মদিনা শরীফ অবস্থানকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার অবস্থান তুলে ধরেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি উল্লেখ করেন ‘‘লালদিয়ার চরের পর পতেঙ্গা থেকে হালিশহর টু কাট্টলীবাসীদের জলে ডুবিয়ে রেখে উৎখাতের চেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরের। এলাকাবাসী সোচ্চার হউন, সচেতন হউন”। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই অত্র বিশাল হালিশহরবাসীর জায়গা জমি বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বারে বারে অধিগ্রহণ করেছে। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পরও বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী। বছরের নানা সময়ে অধিগ্রহণের খড়গ ঝুলতে থাকে ঐ এলাকার অধিবাসীদের ঘাড়ে। তারপরও বঞ্চিত এলাকাবাসীর মনে অতটুকু স্বস্তি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেনইবা বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার সমীক্ষা ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে দেয়াল নির্মাণ করে বিশাল এলাকাবাসীকে পানিতে নিমজ্জিত করতে চায় তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত? তাহলে কি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্রশাসকের আশংকাই সত্যি ‘‘লালদিয়ার চরের পর পতেঙ্গা থেকে হালিশহর টু কাট্টলীবাসীদের জলে ডুবিয়ে রেখে উৎখাতের চেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরের”। আমরা অতিসত্বর বন্দর কর্তৃপক্ষের এহেন পরিকল্পনাহীন প্রকল্প বন্ধ করে সিডিএ সহ নগর পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট সবিনয় আবেদন জানাই। নচেৎ যে কোন প্রকার উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষই দায়ী থাকবেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিশিষ্ট কলামিস্ট প্রফেসর ফজলুল হক, রাজনীতিবিদ ইন্দু নন্দন দত্ত, সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন, নুরুল কবির, মোরশেদ আলম, ডা. অঞ্জন কুমার দাশ, অনির্বাণ দাশ বাবু, সমীর মহাজন লিটন, সাইফুল্লাহ আনছারী প্রমূখ।