বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়(চবি) শাখা ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রসংগঠন সমূহের নেতৃবৃন্দের সাথে শহীদ জোবায়ের মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) মতবিনিময় সভা করেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি নাহিদুল ইসলাম।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান, চবি ছাত্রশিবিরের ছাত্রআন্দোলন সম্পাদক ইসহাক ভূইয়া, প্রচার সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব, চবি ছাত্রঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব রোমান রহমান, চবি ছাত্রমজলিস সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি নাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে অবৈধভাবে সুবিধাভোগী সকল দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গ্রেফতারকৃত অনেক অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, যারা বের হয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে। অবিলম্বে সকলের গ্রেফতার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একসময় ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্য ছিলো সকল ছাত্রসংগঠন একটেবিলে চায়ের আড্ডায় বসা। এখন সেরকম পরিবেশ দেখা যায় না। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রসংগঠন গুলোর ঐক্যের ক্ষেত্রে ছাত্রশিবির সবসময় উদার দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে। ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টায় যারাই আমাদেরকে ডাকবে, আমরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্তরিকতার সাথে তাঁদের ডাকে সাড়া দিব। আগামীতে যারাই ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ছাত্রসমাজ রাষ্ট্রের সংস্কার চায়। ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে জুলাইয়ের চেতনার আলোকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চায়। গত ১৬ বছর ছাত্রলীগ প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসে তান্ডব চালিয়েছে। এখন বাংলাদেশ স্বাধীন। জুলাইয়ের আন্দোলনকারীরাই আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে ছাত্রদের অধিকার আদায় নিশ্চিতকরণে অবিলম্বে ছাত্রসংসদ কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে শুরু হলেও এতে বাংলাদেশের আপামর জনতা যুক্ত হয়েছিল। এখন জনতাকে মাইনাস করে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। এজন্য জুলাইয়ের প্রকৃত ইতিহাসকে সংরক্ষণ করতে হবে। বর্তমান সরকার প্রচলিত নিয়মের কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, শুধু নির্বাচন দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংস্কার সম্ভব নয়। এই সরকার নিজেদের বিপ্লবী সরকার হিসেবে ধারণ করে রাষ্ট্রের সকল কাঠামোতে সংস্কার করবেন। এক্ষেত্রে জুলাই অভ্যুত্থানের ন্যায় বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সরকারকে সহায়তা করবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্টদের দমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সহায়তা নিতে হবে। শহীদ পরিবারের খোঁজ নেওয়া, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হবে। ইসকনের আধিপত্য রোধ করা এবং সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, সকল ছাত্রসংগঠন গুলো একসাথে বসতে পারলে নিজেদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায়। সবার ন্যারোটিভ বুঝা যায়। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন কোনোভাবেই চলবে না। শিক্ষকদের অনেকেই বিগত সময়ে ফ্যাসিস্টদের সহযোগী হয়ে ভূমিকা পালন করেছো। যারা শিক্ষার্থীদের হয়রানি করতো৷ এদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রআন্দোলন সম্পাদক ইসহাক ভূইয়া বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনের শহীদেরা আমাদের সম্পদ। তাঁদের রক্তের উপর গড়ে উঠা প্রশাসনকেই অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব বলেন, শেখ হাসিনার পরিচয় কেবল স্বৈরাচারী নয়, সে ছিলো ফ্যাসিস্ট। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা সেক্টরকে সে তার ফ্যাসিবাদের আদলে গড়ে তুলেছিলো। হাসিনার রেখে যাওয়া ফ্যাসিস্ট কাঠামোকে ভাঙতে সকল অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা কেউ নিজেরা মবের মাধ্যমে কারো বিচার করবো না, দেশের আইনের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের বিচারের মুখোমুখি করাতে হবে।
ছাত্রঅধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব রোমান রহমান সবাইকে একসাথে বসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মের ব্যাপারে সকল ছাত্রসংগঠন পজেটিভ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন ভিন্ন একটি প্লাটফর্ম গড়ে তুলে, যারা কেবল প্রতিবিপ্লব রুখতেই ভূমিকা পালন করবে।
ছাত্রমজলিশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি বলেন, জাতীয়ভাবে সংহতি সপ্তাহ পালন করেও সকলের অংশগ্রহণ না থাকা হতাশাব্যঞ্জক। চট্টগ্রাম যেমন ইসলামপন্থীদের জন্য উর্বর ভূমি, তেমনি ফ্যাসিস্টদেরও শক্ত ঘাঁটি। এজন্য জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে ফ্যাসিস্টদের প্রতিহত করতে হবে।
ইসলামী ছাত্রআন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই বিপ্লবের চেতনা ছিলো, প্রত্যেক ফেরাউনের জন্যই মূসার আগমন ঘটে। জুলাই আন্দোলনে হাসিনা ছিলো ফেরাউন, ছাত্রজনতা ছিলো মূসা। এখনও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফ্যাসিস্টদের চিহ্ন বিদ্যমান। এগুলোকে চিরতরে মুছে ফেলতে হবে।
উপস্থিত সকল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।